আজ বুধবার, ১২ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রশাসন, সাংবাদিক, উকিলদের কটাক্ষ করে না’গঞ্জ জ্বালিয়ে দেয়ার হুমকি! হেফাজতের খুটির জোড় কোথায়?

হেফাজতের খুটি

হেফাজতের খুটি

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতের আমীর ও ডিআইটি মসজিদের খতিব মাওলানা আবদুল আউয়ালের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়েরকে কেন্দ্র করে তিনি ও তার অনুসারিরা দেশের আইন-কানুনকে তোয়াক্কা না করে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। আর এতে করে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে হেফাজত নেতারা এসব উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়ার এমন দুঃসাহস দেখায় কি করে। আর তাদের কিইবা এমন খুঁটির জোড় যার কারণে প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জেলাবাসীর মনে।
শুক্রবার (১১ মে) দুপুর ২টায় জুম্মার নামাজ শেষে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে এবং ডিআইটি মসজিদে জুম্মার নামাজে খুতবা পরবর্তি বক্তৃতায় মাওলানা আউয়াল ও গার অনুসারিরা যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তা একপ্রকার আইনকে হুমিক স্বরুপ বলে মনে করেন সচেতন মহল।
সচেতন মহলের মতে, তাদের বক্তৃতায় স্পষ্ট প্রতিয়মান তারা দেশের আইন ও বিচার বিভাগের কোন তোয়াক্কা করেননা। এমনকি তারা আইনজীবি ও সাংবাদিকদেরকে নিয়ে অশালীন বক্তব্য দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতে ইসলামের আমীর আব্দুল আউয়ালের বিরুদ্ধে ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করার অভিযোগ তুলে বুধবার (৯ মে) নারায়ণগঞ্জ চীফ জুডিশিয়াল (ঘ বন্দর) আদালতে এ মামলা দায়ের করেন জেলা ইসলামী ছাত্রসেনার সভাপতি রাহাত হাসান রাব্বি।
মামলার বাদীর আইনজীবী এএমএ একরামুল হক জানান, চলতি বছরের ২৩ মার্চ বন্দরের একটি ওয়াজ মহফিলে জশনে জুলুসের র‌্যালি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় তার বাদী এটাকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ করে উক্ত আদালতে অভিযোগ করেছেন। বিচারক অভিযোগটি আমলে নিয়ে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এই অভিযোগটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালত অভিযোগ আমলে নিয়েই অভিযোগটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আর এর জের ধরে মাওলানা আউয়ালের অনুসারিদের একজন মাওলানা মাসুম বিল্লাহ হুঙ্কার দিয়ে বলেছেন, এসব মামলা যদি প্রত্যাহার করা না হয় তাহলে নারায়ণগঞ্জে আগুন জ্বলবে।
মাওলানা আউয়ালের আরেক অনুসারি ওলামা পরিষদের তথ্য বিষয়ক সম্পাদক কামাল উদ্দিন দায়েমী বলেন, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করো, নইলে তৌহিদী জনতা ক্ষেপলে তার ফলাফল কিন্তু ভালো হবে না।
আরেক অনুসারি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান একধাপ এগিয়ে ঘোষনা দিয়েছেন, প্রশাসন যদি একবার অনুমতি দিলে, তোমাদের খানকা, ভন্ডামির জায়গা চুরমার করতে দুই মিনিটও লাগবে না। তৌহিদি জনতার প্রধান সমন্বয়ক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, আমরা আর কত ধৈর্য ধরব? কয়েকবারই তো ধৈর্যের পরীক্ষা দিলাম। অপরাধ করল তারা মামলা হল আমাদের নামে, এর চেয়ে বড় ধৈর্য আর কি আছে? প্রশাসনকে আবারো বলছি, আপনারা সিদ্ধান্ত নেন কি করবেন। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। প্রশাসন শুধু অনুমতি দেক, এদের সবকটি খানকা ভন্ডামির জায়গা যেগুলি আছে সেগুলো ২ মিনিট লাগবে না নারায়ণগঞ্জবাসীর চুরমার করতে। এই নাপাকী তামিম বিল্লাহ আমাদের মামলা পাবারও উপযুক্ত নয়।
তিনি তামিম বিল্লাহ কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ওর কত বড় স্পর্ধা! মাওলানা আবদুল আউয়ালের বিরুদ্ধে মামলা করে? ইচ্ছে করে তোমাদের (তামিম বিল্লাহ) কলিজা ছিড়ে হাতে নিয়ে দেখতে, তোমাদের কলিজা কত বড়? প্রশাসনকে শেষ আল্টিমেটাম দিয়ে গেলাম, আর ধৈর্য ধরতে পারব না। তাদেরকে খুজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন, অন্যথায় তৌহিদি জনতাকে আর থামায়া রাখার শক্তি আমাদের নাই।
অন্যদিকে জেলা হেফাজতের আমির মাওলানা আউয়াল ডিআইটি মসজিদে তার বক্তৃতায় তিনি নিজেকে হকের পক্ষে দাবি করে বলেন, নারায়ণগঞ্জেও হকের কথা বলতে গিয়ে বাতিলের পক্ষ থেকে মামলা হামলার শিকার হতে হচ্ছে উলামা পরিষদের নেতৃবৃন্দের। বাতিলের শক্তি কতো বেশী হয়েছে যে, তারা ওলামায়ে কেরামগনের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলা দায়ের করছে আর সে মামলায় নাকি ২০ জন উকিলও দাঁড়িয়েছিলেন। উকিলরা আর কিইবা করবে, তারাতো বুদ্ধি বেইচ্চা খায়।
তা নাহলে মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ লিখে মামলা করলো আর সে মামলায় উকিলরাও দাঁড়িয়ে গেলো, তা কি করে হলো!
শুক্রবার (১১ মে ) ডিআইটি মসজিদে পবিত্র জুম্মা’র নামাজের বয়ানে তিনি এসব কথা বলেন।
মাওলানা আবদুল আউয়াল সাংবাদিকদের সমালোচনা করে বলেন, সাংবাদিকরাও আজকাল টাকায় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, আর যারা টাকায় বিক্রি হয়ে যায়, তারা হকের কথা লিখতে পারে না, তাদের কলমে হক আসবে না।
সচেতন মহলের মতে, আদালতে যে কেউ মামলা করতে পারেন। এটা একটি স্বাধিন দেশের নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। আর আদালত উভয় পক্ষের দিকেই সমান সুযোগ দিয়ে থাকেন। আদালতে করা মামলা নিয়ে তারা এভাবে প্রকাশ্যে কাউকে মেরে কলিজা বের করার হুমকি কি দিতে পারেন। আইনজীবিদের কাজ হলো মানুষকে আইনি সেবা দেয়া। হেফাজতের নেতারা সেই আইনজীবিদেরকে নিয়েই অশালীন মন্তব্য করতে দ্বিধান্বিত হলেন না। আর সাংবাদিকদের বলা হয় জাতীর বিবেক। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ব সংবাদ মাধ্যম। এদের নিয়ে যে মন্তব্য হেফাজত আমির করেছেন তাতে কি রাষ্ট্রের একটি স্তম্বকে অবমাননা করে রাষ্ট্রকে সম্মান জানানো হলো?